আপনি ইফতারির মুড়িমাখায় জিলাপির পক্ষে না বিপক্ষে? জরিপ ও পুষ্টিবিদ কী বললেন

প্রকাশিত: ৯:৪৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০২৫

প্রতিবছর রমজান মাসে একটি বিতর্ক যেন অবধারিত—ইফতারির মুড়িমাখায় জিলাপি মেশানো ঠিক, নাকি ভুল? এই বিতর্ক জমে ওঠে যেকোনো আড্ডায়। তবে ইদানীং বিতর্কের মূল মঞ্চ হয়ে উঠেছে মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ফেসবুক। পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখার আগেই তাই ফেসবুকে দেখা যায় ‘মুড়িমাখায় জিলাপি প্রতিরোধ কর্মসূচী’–জাতীয় ইভেন্ট। আদতে কোন দলের পাল্লা ভারী, সেটিই জানার চেষ্টা করেছিলাম আমরা। সঙ্গে থাকছে পুষ্টিবিদের মতামত—মুড়িমাখায় জিলাপি কতটা স্বাস্থ্যকর?

কে কী বলছেন

অনেকের কাছে জিলাপি ছাড়া ইফতার ঠিক জমে না। এটা অনেকের কাছে আবেগের বিষয়। ছোলা, মুড়ি, পিঁয়াজু, বেগুনিসহ নানা পদের চপের সঙ্গে জিলাপি মিশিয়ে খাওয়াতেই তাঁদের আনন্দ। অনেকে আবার মুড়িমাখায় জিলাপির অন্তর্ভুক্তি মানতেই পারেন না। তাঁদের বক্তব্য, ‘ঝালের সঙ্গে আবার মিষ্টি কেন! মিষ্টি খেতে হলে আলাদা করে মিষ্টিই খাও।’

এটা কি দেশের বিশেষ কোনো অঞ্চলের খাবার? কেন এটা কেউ পছন্দ করেন আবার কেউ এড়িয়ে চলেন? দেশের একাধিক অঞ্চলের বিভিন্ন বয়সী ১২ জনের সঙ্গে ইফতারির মুড়িমাখায় জিলাপি মেশানোর ব্যাপারে কথা বলে যেটা বোঝা গেল, এটা অঞ্চলগত কোনো ব্যাপার নয়। অর্থাৎ অমুক অঞ্চলের মানুষ এটা পছন্দ করেন আর তমুক অঞ্চলের মানুষ পছন্দ করেন না, তা নয়।

ঝিনাইদহের তরুণী তানজিনা বললেন, ‘মুড়িমাখায় জিলাপি মিশিয়ে খেতে মজা লাগে। ঝালের সঙ্গে একটু মিষ্টি মিষ্টি ভাব মুড়িমাখার স্বাদটা দ্বিগুণ করে দেয়।’ জিলাপি–বিরোধীদের সম্পর্কে এই তরুণীর বক্তব্য, ‘তাঁদের হয়তো হজম করতে সমস্যা হয়, তাই মুড়িমাখায় জিলাপি তাঁরা পছন্দ করেন না।’

উত্তরবঙ্গের ৫৬ বছর বয়সী জোবেদা আক্তারের বক্তব্যও প্রায় একই। তাঁর মতে, ‘লালমনিরহাট জেলার ইফতারে বুট, বুন্দিয়া আর জিলাপি অবশ্যই লাগবে। ইফতারে সব উপকরণ মাখানোর পর সেটির সঙ্গে কড়কড়া জিলাপিতে কামড় না বসালে ইফতারে তৃপ্তি হয় না। আমাদের সবচেয়ে বেশি পছন্দ আখের গুড়ের জিলাপি, যা উত্তরবঙ্গে বেশি পাওয়া যায়।

খাবার ও আঞ্চলিকতা নিয়ে যদি ট্রলের হিসাব কষা হয়, সে ক্ষেত্রে নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষদের ঘিরেই বেশি। তাই মুড়িমাখায় জিলাপি বিতর্কে এই অঞ্চলের মতামতও নিয়েছি আমরা। সেখানে মুড়িমাখায় জিলাপির পক্ষে যেমন আছেন, বিপক্ষেও আছেন অনেকে। নোয়াখালীর কাপড় ব্যবসায়ী মিলন হকের মতে, মুড়িমাখায় জিলাপি মিষ্টি-ঝালের সংমিশ্রণের অনন্য স্বাদ তৈরি করে, যা নোয়াখালীর খাদ্যসংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ এটা নোয়াখালীর মানুষ আপন করে নিয়েছেন। তাঁর ভাষায়, ‘জিলাপির মিষ্টি ইফতারের সময় দ্রুত শক্তি জোগায়। ইফতারে সবাই একসঙ্গে বসে মুড়ির সঙ্গে সব উপাদান মেখে খাওয়ার মজাই আলাদা।’

চট্টগ্রাম শহরের জিহাদ বললেন, ‘ছোলা-মুড়ি এমন এক যুগল, যার মধ্যে জিলাপি দেওয়া মানে তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি। ছোলা–মুড়ি চট্টগ্রামেরও ঐতিহ্যবাহী ইফতারি। তবে এই খাবারে জিলাপি মেশালে ঝাল-মিষ্টি মিলিয়ে খুব অদ্ভুত এক স্বাদ তৈরি করে। তখন খাবারগুলোর নিজস্ব স্বাদ আর পাওয়া যায় না।’