গ্রাম-বাংলার অনন্য রূপকার কবি জসীমউদ্দীন

প্রকাশিত: ৭:৩৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৪, ২০২৫
পল্লীকবি জসীমউদ্দীন ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই কবি ১৯৭৬ সালের ১৪ মার্চ ৭৩ বছর বয়সে রাজধানী ঢাকায় মারা যান। পরে তাকে ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের পৈতৃক বাড়ির আঙিনায় তার প্রিয় ডালিমগাছের নিচে কবর দেওয়া হয়।
বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় কবি জসীমউদ্দীন ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর সদর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের তাম্বুলখানা গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আনসারউদ্দীন মোল্লা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক এবং মা আমিনা খাতুন ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ গৃহিণী। শৈশব থেকেই তিনি গ্রামীণ পরিবেশের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট ছিলেন, যা পরবর্তী সময়ে তার সাহিত্যকর্মে প্রবলভাবে প্রতিফলিত হয়। 
 
পল্লীকবি ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯২৯ সালে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৩১ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তার স্নাতকোত্তর গবেষণার বিষয় ছিল ‘নকশী কাঁথার মাঠ’, যা পরবর্তী সময়ে তার অন্যতম বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থে পরিণত হয়।
 

জসীমউদ্দীন ছিলেন প্রকৃত অর্থে পল্লীর কবি। তিনি গ্রামবাংলার মানুষের জীবন, সংস্কৃতি ও প্রকৃতিকে অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহীভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার কবিতায় ছিল সহজ-সরল ভাষা, যা সাধারণ মানুষও সহজেই বুঝতে পারত। ছাত্রজীবনে লেখা তার ‘কবর’ কবিতাটি পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হলে তিনি ব্যাপক পরিচিতি পান। এছাড়া ‘মধুমালা’, ‘বেদের মেয়ে’, ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’, ‘নকশী কাঁথার মাঠ’, ‘ঠাকুর বাড়ির আঙিনায়’, ‘সুচয়নী’ প্রভৃতি লেখায় গ্রামবাংলার মানুষের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা উঠে এসেছে বলে তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

বাংলা সাহিত্যে পল্লী কবি উপাধিতে ভূষিত জসীমউদ্দীন এমনই এক ব্যাক্তিত্ব যিনি আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে লালিত পূর্ণাঙ্গ কবি। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো ‘নকশী কাঁথার মাঠ’, ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’, ‘বালুচর’, ‘রাখালী’। উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘কাজল ভ্রমরা রে’, ‘আমার সোনার ময়না পাখি’, ‘আমার গলার হাড় খুলে নে’, ‘আমার হাড় কালা করলাম রে’, ‘আমায় ভাসাইলি রে’, ‘আমায় এতো রাতে’, ‘কেমন তোমার মাতা পিতা’, ‘নদীর কূল নাই কিনার নাই’, ‘ও বন্ধু রঙিলা’, ‘রঙিলা নায়ের মাঝি’ ইত্যাদি।

তার উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘পদ্মাপাড়’, ‘বেদের মেয়ে’, ‘মধুমালা’, ‘পল্লীবধূ’, ‘গ্রামের মেয়ে’ ইত্যাদি। তার লেখা অনেক কবিতা ও গান পরবর্তীকালে রবীন্দ্রসংগীত ও লোকগীতির মতো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

জসীমউদ্দীন তার কর্মজীবন শুরু করেন একজন শিক্ষক হিসেবে। এরপর তিনি রেডিওতে কাজ করেন এবং সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন এবং পরে একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন। তার লেখা ও অবদান আজও বাংলা সাহিত্যে উজ্জ্বল হয়ে আছে।