বোনকে তাঁর ননদ খুব জ্বালায়, আইনিভাবে প্রতিকার সম্ভব?

প্রকাশিত: ৯:৪২ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০২৫

প্রশ্ন: আমার ফুফাতো বোনের দুই ছেলে-মেয়ে। মেয়েটা পঞ্চম শ্রেণিতে আর ছেলেটা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। দুলাভাই একটি আধা সামরিক বাহিনীতে চাকরি করেন। একেক সময় একেক জায়গায় পোস্টিং। তাই স্ত্রী–সন্তানকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতে পারেন না। মাঝেমধ্যে ছুটিতে আসেন দুলাভাই। আমার ফুফাতো বোনের সঙ্গে থাকে তাঁর ননদ। বোনের সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করে সেই ননদ। দুলাভাই যখন থাকেন না, তখন আমার বোনকে খুব বিরক্ত করে। যেমন আমার বোনের মেয়ের জন্য স্কুলে যে টিফিন দেবে, তার মেয়েকেও সেই টিফিন দিতে হবে। বোনের মেয়েকে যদি কোনো খেলনা কিনে দেয়, তাহলে ননদের মেয়েকেও দিতে হবে। সব সময় সেটা সম্ভব না হলেও জোর করে কেনাতে বাধ্য করে। না দিতে চাইলে বোনের মেয়েরটা কেড়ে নেয়। এই বিষয়ে কী কোনো আইনি প্রতিকার পাওয়া সম্ভব?

উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনার বোনের ননদ তাঁর সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করছেন, আমার কাছে তা মানসিক নির্যাতন বা অস্বাভাবিক কোনো আচরণ মনে হচ্ছে না। একসঙ্গে বসবাস করলে এ ধরনের ছোটখাটো মনোমালিন্য হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। শিশুরা একসঙ্গে খেলাধুলা করলে তাদের মধ্যে কান্নাকাটি এবং ঝগড়া–বিবাদ হওয়াটাও সাধারণ বিষয়। এটি শিশুর বেড়ে ওঠার একটি প্রক্রিয়া। এখানে অভিভাবকদের অযাচিত হস্তক্ষেপ না করাই ভালো। আমার মনে হয় না এ ধরনের দৈনন্দিন ছোটখাটো বিষয় মানসিক নির্যাতন হিসেবে বাংলাদেশের আইনে পারিবারিক সহিংসতার আওতাভুক্ত হবে।

পারিবারিক সহিংসতা বলতে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোনো ব্যক্তি কতৃর্ক পরিবারের অপর কোনো নারী বা শিশু সদস্যের ওপর শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন অথবা আর্থিক ক্ষতিকে বোঝাবে। এই আইন অনুযায়ী মৌখিক নির্যাতন, অপমান, অবজ্ঞা, ভয় দেখানো ইত্যাদি আচরণ পারিবারিক সহিংসতা হিসেবে গণ্য করা হবে। এ ছাড়া হয়রানি, ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ; অর্থাৎ স্বাভাবিক চলাচল, যোগাযোগ বা ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা মতামত প্রকাশে বাধা দেওয়া, কথা শোনানো, পুরুষতান্ত্রিক আচরণ দিয়ে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা, সন্দেহ করা এগুলোও সহিংসতার আওতাভুক্ত হবে।

জাতিসংঘ ঘোষিত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ–১৯৭৯ ও শিশু অধিকার সনদ–১৯৮৯–এর স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত নারী ও শিশুর সম–অধিকার প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ, পারিবারিক সহিংসতা থেকে নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ প্রণীত হয়েছে।