রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতি-যৌন নিপীড়ন: বড়াইগ্রামের ওসিকে প্রত্যাহার

প্রকাশিত: ১২:১০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক :

ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস বাসে ডাকাতি ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

শুক্রবার বিকালে সিরাজুল ইসলামকে নাটোরে পুলিশ লাইন্সে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বড়াইগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহাবুবুর রহমান।

এ বিষয়ে রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, “বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানীর ঘটনায় ভুক্তভোগীরা থানায় গিয়ে সেবা পাননি, যে কারণে তাকে (ওসিকে) প্রত্যাহার করা হয়েছে।

“ওসির দায়িত্বে অবহেলার কারণে বিষয়টি ধীরে ধীরে জটিল আকার ধারণ করেছে।”

শুক্রবার বিকালে ডিআইজি শাহজাহান বড়াইগ্রাম থানা পরিদর্শন করেন এবং এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেন। ভুক্তভোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন তিনি।

এসময় তিনি বলেন, “আশা করছি দ্রুত সময়ে এ ঘটনার রহস্য উন্মোচন করতে পারব।”

এদিকে, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহাবুবুর রহমান।

এর আগে সোমবার রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস পরিবহনের বাসে ডাকাতি ও দুই নারী যাত্রীকে ‘যৌন নিপীড়নের’ অভিযোগ উঠে।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে মঙ্গলবার দুপুরে বাসের চালক, সুপারভাইজার ও সহকারীকে গ্রেপ্তার করে বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ।

সেদিন এক প্রশ্নের জবাবে বড়াইগ্রাম থানার তৎকালনি ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এটাতো টাঙ্গাইলের ঘটনা বলছে যাত্রীরা। তাই বড়াইগ্রাম থানায় মামলা নেওয়ার সুযোগ নাই। এছাড়া গ্রেপ্তাররা ওই ঘটনায় জড়িত বলে যাত্রীরা সন্দেহ করছে।

“যারা গ্রেপ্তার আছে কালকে (বুধবার) সকালে তাদের ৫৪ ধারায় আমরা চালান দিয়ে দিব। ভুক্তভোগী যাত্রীদের মীর্জাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মীর্জাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করলে গ্রেপ্তারদের সেখানে হস্তান্তর করা হবে।”

পরে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার বাসের চালক বাবলু আলী (৩০), সুপারভাইজার সুমন ইসলাম (৩৩) এবং সহকারী মাহবুব আলমকে (২৮) ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার বিকালে আদালতে পাঠানো হয়।

সন্ধ্যায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তৌহিদুর রহমান সুমন শুনানি শেষে তাদের জামিনে মুক্তির আদেশ দেন বলে সাংবাদিকদের জানান, কোর্ট ইন্সপেক্টর মোস্তফা কামাল।

মামলাটি ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ধারার হওয়ায় এবং আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ সুনির্দিষ্ট না থাকায় আদালত তাদের জামিনের আদেশ দেন বলে জানান তিনি।

এদিকে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর থেকে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

ঘটনার রাতে বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের যৌন নিপীড়নের বিষয়ে মির্জাপুর থানায় জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

পরে ঘটনার তিনদিন পর শুক্রবার দুপুরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় মামলা হয়েছে।

বাসটির যাত্রী নাটোর জেলার বড়াইগ্রামের ওমর আলী বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে জানান, মির্জাপুর থানা ওসি মো. মোশাররফ হোসেন।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, সোমবার রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে বাসটি রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসে। পথে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানা এলাকায় বাসটি থামিয়ে যাত্রীবেশে ৮-৯ জন ডাকাত বাসে ওঠে অস্ত্রের মুখে চালককে জিম্মি করে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়।

পরে ডাকাতরা বাসটিকে টাঙ্গাইলের দিকে নিয়ে চালাতে থাকে। মির্জাপুর থানাধীন সোহাগপাড়া এলাকায় নিয়ে রাত পৌনে ২টার দিকে ডাকাতরা যাত্রীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ডাকাতি শুরু করে। যাত্রীদের টাকা-পয়সা ও সোনা-রূপার গহনা ছিনিয়ে নেয়।

ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বাসটিকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানী করে নেমে যায়।

মামলায় আরও বলা হয়, ডাকাতরা নেমে যাওয়ার পর চালক বাসটি নিয়ে গন্তব্যে যেতে অস্বীকৃতি জানান। পরে যাত্রীদের চাপের মুখে বাস নিয়ে যাত্রা শুরু করেন চালক।

এ ঘটনায় যাত্রীরা বাসের চালক ও স্টাফদের জড়িত থাকার সন্দেহ করেন। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে যাত্রীরা বাসটিকে নিয়ে বড়াইগ্রাম থানায় নিয়ে যান।