কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে যুবদল নেতার বিরুদ্ধে এক যুবককে আটকে রেখে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার মৌকরা ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগের একটি ভিডিও বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অভিযুক্ত আব্দুর রহিম নাঙ্গলকোট উপজেলার মোড্ডা গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে। তিনি মৌকরা ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর রহিম ক্ষিপ্ত হয়ে ইউনিয়নের গোমকোট বাজারে জসিম নামে এক ফার্নিচার ব্যবসায়ীর দোকানে গিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে।মারধরের শিকার জসিমের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার রাতে যুবদল নেতা রহিমকে আটক করে নাঙ্গলকোট থানাপুলিশ। বৃহস্পতিবার নাঙ্গলকোট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম ফজলুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।অভিযোগ উঠেছে, এর আগে চাঁদার জন্য এক ব্যক্তিকে একটি দোকানে আটকে রেখে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ব্যাপক মারধর করেন ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি রহিম। এমন ঘটনার ২ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি সবার নজরে আসে। তবে মারধরের শিকার ওই ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
ভাইরাল ওই ভিডিওতে যুবদল নেতা রহিমকে একজনের সঙ্গে লাউডস্পিকারে মোবাইল ফোনে কথা বলতে শোনা যায়। মোবাইলের অপরপাশের ব্যক্তিকে উদ্দেশ করে রহিমকে বলতে শোনা যায়, “আপনি ২০ হাজার টাকা দেবেন।” সে সময় অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি বলে ওঠেন, “আপনি তো আমার সঙ্গে চাঁদাবাজি করছেন।” তখন যুবদল নেতা রহিম বলেন, “আপনার সঙ্গে চাঁদাবাজি করলো কে? চাঁদাবাজি করলে আপনি কবেই এই এলাকা থেকে আউট হয়ে যেতেন।” এ সময় অপরপাশের ব্যক্তি বলেন, “চাঁদাবাজি না করলে আমি আমার তরফ থেকে যেটা দেবো, আপনাকে সেটা নিতে হবে। আমি কী করি আপনি চিটাগং (চট্টগ্রাম) শহরে গিয়ে খবর নেন।” উত্তরে যুবদল নেতা রহিম বলেন, “আপনি চিটাগং শহরের অনেক বড় নেতা। আমি আপনার কাছে চাঁদা চাইছি? আপনি ৫ হাজার টাকা দিচ্ছেন। আমার এখানে প্রোগ্রামে খরচ করলাম আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা।” এ সময় যুবদলের নেতা রহিম অপর ব্যক্তিকে গালিগালাজ করতে থাকেন।
একপর্যায়ে যুবদল নেতা মোবাইল ফোন রেখে অপরপাশের ব্যক্তির প্রতিনিধি এক যুবককে ধাক্কাতে ধাক্কাতে একটি দোকান ঘরে ঢোকান। সঙ্গের একজনকে ওই যুবককে বেঁধে রাখতে নির্দেশ দেন। পরে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে বেদম প্রহার করা হয়। এ ঘটনার দৃশ্য ঘটনাস্থলে থাকা কেউ একজন তার ফোনে ধারণ করে রাখেন। পরে তা ফেসবুকে পোস্ট করলে মুহূর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হতে থাকে।
অপরদিকে, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পেছনে গোমকোট বাজারের ফার্নিচার ব্যবসায়ী জসিমের হাত রয়েছে বলে ধারণা করেন যুবদলের নেতা রহিম। বুধবার রাত ৮টার দিকে জসিমের ফার্নিচারের দোকানে গিয়ে হামলা করেন তিনি। এ সময় জসিমকে মারধর করেন। ভাঙচুর চালান তার ফার্নিচার দোকানে। পরে নাঙ্গলকোট থানায় গিয়ে মারধরের শিকার জসিম বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।
রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে নিজ বাড়ির সামনে থেকে যুবদলের নেতা আব্দুর রহিমকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি মৌকরা ইউনিয়ন বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর ভূঁইয়া। ওই অনুষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী, ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে আসছিলেন যুবদলের নেতা আব্দুর রহিম।
অভিযুক্ত যুবদল নেতা পুলিশ হেফাজতে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মনির হোসেন বলেন, ‘রহিমের ভাইরাল ভিডিওটি যুবদলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে।’
বুধবার রাতে রহিমকে যুবদলের সাধারণ সদস্য পদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।
নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল হক বলেন, ‘জসিম উদ্দিন নামের একজনের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আব্দুর রহিমকে আটক করা হয়েছে। তাকে আদালতে তোলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’
সম্পাদক ও প্রকাশক- মোঃ সোহান মাহমুদ